নানা টালবাহানার পর আগামী ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের ঘোষণা হয়েছে। সংগঠনটির শীর্ষ পদ পেতে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য, সম্মেলন ছাড়াই প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি গঠনসহ নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। আছে বয়স সংক্রান্ত বিষয়; আরও নানা সমস্যা-অভিযোগ। এ অবস্থায় জানা গেল, সম্মেলন অনুষ্ঠানেই সংগঠনের নেতাদের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হবে। নেতৃত্বেও থাকছে নানা সমীকরণ।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে যারা আপোষহীন- তারা জায়গা পেতে পারেন ছাত্রলীগে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় ও মানবিক কাজে যেসব ছাত্রনেতারা ব্যাপক আলোচিত তারা এগিয়ে থাকবে নেতৃত্বের দৌড়ে। মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে দক্ষ নেতৃত্বও সংগঠনে আসবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নীতি-নির্ধারকরা। বাদ পড়বেন তারা, যাদের পরিবার জামায়াত-বিএনপির সংশ্লিষ্ট।
গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ছাত্রলীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানেই এসব ব্যাপারে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ নেতৃত্ব নির্ধারণ করে থাকেন। তাই সম্মেলনের আভাস পেয়ে পদ প্রত্যাশীরা হাইকমান্ডের কাছে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন। কে কত ত্যাগী, কত যোগ্য সেটা বোঝাতে ব্যস্ত সময়ও তারা পার করছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন দুই বছরের জায়গায় ৪ বছর পার হয়ে গেছে। ফলে বয়সসীমা নিয়ে আলোচনা ওঠে। নীতি নির্ধারকরা এবারের সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বয়সসীমা ২৮ বছর ৩৬৪ দিন থেকে এক বছর বাড়াতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মৌলবাদবিরোধী অবস্থান যাদের আছে, যারা জনপ্রিয় তারা কমিটিতে গুরুত্ব পাবে। এ সময় সম্মেলনের মাঠেই নেতাকর্মীদের বয়সসীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বের আলোচনায় এগিয়ে আছেন সাদ্দাম হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এ সাধারণ সম্পাদক সুবক্তা ও ছাত্রসমাজে জনপ্রিয়। নেতৃত্বের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোষহীন নেতৃত্ব প্রয়োজন। মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের বিরুদ্ধে দক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে পারার যোগ্যতা আগামীর নেতৃত্বের প্রয়োজন। এসব নেতৃত্বের গুণাবলী নিজের মধ্যে আছে বলেও তিনি মনে করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান এবার নেতৃত্বের আশা করছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের আগামী নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জিং হবে। আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামাত নৈরাজ্য করার অপচেষ্টা চালাবে। এজন্য সাহসী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়িক এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আপোষহীন নেতৃত্বের বিকল্প নাই।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি স্থাপন ও করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় আসা ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমাদের সংগঠন যেকোনো দুর্দিনে মানুষের পাশে থেকেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীর বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়গুলো আমি বা আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাই।
ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী যেমন বেড়েছে তেমনি ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছে ছাত্রলীগকে। এসব ঘটনায় যেন ছাত্রলীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সেজন্য আসতে পারে নারী নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার বলেন, শেখ হাসিনার সমতাভিত্তিক বাংলাদেশে নারী বলেই কেউ নেতৃত্ব আসবে এটা আমি মনে করি না। নারী বা পুরুষ যেই যোগ্য তিনি যেন নেতৃত্বে আসেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়া ও ছাত্রী আন্দোলনের সংকটময় পরিস্থিতিতে যেন ছাত্রলীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় সেজন্য নারী নেতৃত্ব প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চল থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ। এবার এসব অঞ্চল থেকে যারা বিবেচনায় আছেন, তারা হলেন-
উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু ও ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন ও সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
বরিশাল বিভাগ থেকে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, সহ-সম্পাদক হামজা রহমান অন্তর।
খুলনা বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহিন, মাগুরা জেলার পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ও চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের।
ময়মনসিংহ থেকে আলোচনায় আছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস ও সহ-সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী।
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি নেতৃত্ব এসেছে ফরিদপুর থেকে। এবার আলোচনায় আছেন সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, কর্মসংস্থান সম্পাদক রনি মোহাম্মদ, উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান ও সুজন শেখ।
নেতৃত্বে নতুন যে সমীকরণ আসবে, সেটি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংগঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ায় এখনই এ বিষয়ে তারা কথা বলতে রাজি নন। পদ প্রত্যাশীরাও এ সমীকরণ দেখতে মুখিয়ে আছেন। তবে তাদের চাওয়া, নতুন কমিটিতে যারাই আসুক দেশ মাতৃকা, আওয়ামী লীগের নীতি, সর্বপোরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে তারা যেন সংগঠন পরিচালিত হয়। স্বাধীনতা বিরোধীদের দেশ থেকে উৎখাতে তারা যেন অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধের প্রতিশ্রুতি নিয়েই যেন আগামীর ভবিষ্যৎ তৈরি হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।